গার্লফ্রেন্ডই
পার্কে বসে গার্লফেন্ডের জন্য অপেক্ষা
করছি এমন সময় পেছন থেকে কে একজন এসে
হবে।না দেখেই বললাম জান চলে এসেছো?
উত্তর শুনে ঘাবড়ে গেলাম খুব।বলল,কোন
কথা বলবেনা চলো আমার সাথে।
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম
--কে আপনি?
বলল,
--জান যেহেতু বলে ফেলেছ জান ই হবে।এত
তাড়াতাড়ি সব হয়ে যাবে আশা করিনি।
--আরে আপনি পাগল নাকি?কে আপনি?
আপনাকেত চিনিনা আমি।
--চিনতে হবেনা।মেয়ে মানুষের স্পর্শ
পেয়ে জান ত ঠিকই বলেছ।আবার এত
ন্যাকামি কিসের?
--আরে আমি আমার...
পুরোটা বলার আগেই থামিয়ে দিয়ে ধমক
দিয়ে বলল,
--কোন কথা শুনতে চাই না।চলো এখান
থেকে।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে বললাম,
--কোথায় যাবো?
--আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানেই।
মেয়েটি আমার হাত ধরে পার্কের বাইরে
নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি কিছুই বলতে
পারছিনা।অনেকবার পরিচয় জিজ্ঞেস
করতে গিয়েও থমকে যাচ্ছি।মেয়েটার
হাতে যথেষ্ট শক্তি আছে বলতেই হবে।লক্ষ্য
করলাম আমাদের পিছু পিছু তিনজন মানুষ
হাটছে।ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে
আমাদেরকে অনুসরণ করেই এগুচ্ছে।সম্ভবত
মেয়েটিকে অনুসরণ করছে।যদিও আমার
অনুমান কতটুকু সত্য বুঝতে পারছিনা।
মেয়েটি আমার হাত ধরে কিছুক্ষণ হাটার
পর বলল,রিকশা ঠিক করতে।আমিও বাধ্য
ছেলের মতো রিকশা ঠিক করে নিলাম।
দুইজনেই রিকশাতে উঠে বসলাম।একটু সাহস
সন্ঞ্চয় করে বললাম,
--আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
--যেদিকে দুচোখ যায়।
--কি বলেন এসব!না না,আমি আর যেতে
পারবো না।এই মামা দাড়ান।
--মামা আপনি যান।এই তোমার সমস্যা কি?
যেখানে নিয়ে যাব সেখানেই যাবে।এত
প্রশ্ন করেবে না।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।একটা
মেয়ে আমাকে এইভাবে জোড় করেই
যেখানে খুশি নিয়ে যাচ্ছে অথচ আমি
কিছুই বলতে পারছি না।কিন্তু মেয়েটি ত
কিছু বলতেই দিচ্ছে না।তাছাড়া মেয়েটির
উদ্দেশ্যটা কি সেটাই ত জানতে পারলাম
না।কিছু বলার আগেই থামিয়ে দিচ্ছে।
এলাকায় যথেষ্ট সাহসি ছেলে নামে
পরিচিত হয়েও এখন আমি আস্ত একটা ভীতুর
ডীম হয়ে বসে আছি।একটা মেয়ের সাথেই
কথা বলতে পারছিনা।ভাবলাম নামটা
জিজ্ঞেস করি।বললাম,
--আপনার নামটাইত জানা হলোনা।
--এই ছেলে আমাকে জান বলছনা?জান বলেই
ডাকবে।আমিও জান বলেই ডাকব।
কি আজিব একটা ব্যাপার।সবকিছুই মুখের
উপর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে।ভুলে কি বলে
ফেললাম আর এটা বলেই নাকি ডাকতে হবে।
নিজের মধ্যেই কেমন একটা অপরাধবোধ
কাজ করছে,একজন ছেলে হয়েও কেন আমি
কিছু করতে পারছি না?কোন প্রশ্নের উত্তর
ও খুজে পাচ্ছিনা।চারপাশের পরিবেশ
দেখে চলতে চলতে একটা কাজী অফিসের
সামনে এসে থামলো।
ভাড়াও দিয়ে দিল নিজে।বলল,
--জান চলো।
--জান চলো মানে কি?কোথায় যাব?
--ঐ যে কাজী অফিস।
--কাজী অফিস মানে!কাজী অফিসে আমার
কাজ কি?তুমিই যাও আমি বাইরেই আছি।
--এই ছেলে ভালোভাবে বললে কি কথা যায়
না কান দিয়ে? বিয়ে করব আমরা চলো।
--বিয়ে... মানে বিয়ে কাকে করব আমি?
কিসের বিয়ে? কি বলছ এসব?এই মেয়ে তুমি
কি পাগল নাকি?
মেয়েটি এবার গলা ছেড়ে চিৎকার করে
কথা বলা শুরু করছে।বলছে,
--তুমি তাহলে আমাকে বিয়ে করবেনা?
--আজিব আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে
যাব?
--তাহলে তোমার সবকিছু মিথ্যা ছিল?এত
সময়ের প্রেম কি তাহলে সব মিথ্যা?
--আরে!কি বলছ এসব তুমি?কিসের প্রেম?
মেয়েটি আবারো চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু
করে দিছে। আশেপাশের মানুষজন জড়ো
হতে লাগল।ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছে
অনেকে।মেয়েটি কান্না করে যাচ্ছে।হঠাৎ
এক লোক এসে বলল,
--আপা আপনি কান্দেন কেন?কি হয়ছে
সবাইকে খুলে বলুন।
মেয়েটি চোখ মুছে নিল।বলল,
--এতদিন আমার সাথে প্রেম করে এখন বলছে
আমাকে বিয়ে করবেনা।আপনারা দেখুন
কিভাবে আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করছে।
কতরাত আমার সাথে কাটিয়েছে আমাকে
বিয়ে করবে বলে এখন বলছে আমাকে নাকি
চিনেইনা।
মেয়েটি আবারও কান্না করছে।ইতিমধ্যেই
আশেপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ
মন্তব্য করাও শুরু করে দিছে।কেউ কেউ বলছে
ছেলেটিকে দেখেত ভালো মনে হচ্ছে।
আরেকজনকে দেখিয়ে বলে উঠলেন,চেহারা
দেখছেন কত মায়াবী!ছেলেটা যে খারাপ
দেখে আপনি বুঝতেই পারবেননা।
কেউ কেউ মেয়েটির চোখের জলও মুছে
দিতে চাচ্ছে।অথচ এইদিকে আমি সম্পূর্ণ
অসহায়।কেউ একজনকে বিষয়টা যে বুঝাব
সেই পরিস্থিতি টাও নেই।অথচ আশেপাশে
সবগুলোই পুরুষ মানুষ।মেয়েটির কান্নার
কাছে সবাই অসহায় হয়ে পড়ছে।এককথায়
বলতে গেলে ইমোশনালি ব্লেকমেইমের
শিকার হয়েছে সবাই।আমার মনে হয় এই
পরিস্থিতিতে আমি থাকলে আমিও
মেয়েটিকেই সাপোর্ট করতাম।কত
নিখুঁতভাবে অভিনয় করে যাচ্ছে মেয়েটি
কারো বুঝার উপায় নেই।কিন্তু একটা
জায়গায় সমস্যা হচ্ছে খুব,মেয়েটি আমাকে
কেন বিয়ে করতে চাচ্ছে? তাছাড়া যে
পরিমাণ রূপ তার মধ্যে আছে তা দিয়ে
চাইলে এই শহরের খ্যাতিমান কাউকে
নিঃসন্দেহে বিয়ে করার যোগ্যতা রাখে।
তাছাড়া ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাবনা
নিয়ে যাওয়ার মতো যোগ্যতাও মনে হয়
আমার নেই।এই একটা প্রশ্নের উত্তর
কিছুতেই মাথায় আসছেনা।
মেয়েটি উপস্হিত জনতাকে উদ্দেশ্যে
বলল,আমাদের তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্হা
করেন।না হয় ও আবার আমাকে বিয়ে না
করে পালিয়ে যাবে।
রাগ হলো খুব।বললাম,কে বিয়ে করবে
তোমাকে?আমি?এই মেয়ে তোমার বাসায়
কি অভিভাবক নেই? উদ্দেশ্য কি তোমার?
তোমাকে কেন আমি বিয়ে করব?
মেয়েটি আবারো কাঁদছে।বলছে,দেখুন
আপনারা।আপনাদের সামনেই আমাকে
বিয়ে করবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছেন।ও
বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করতে
বাধ্য হবো।প্লিজ আপনারা কিছু একটা করুন।
একজন বলে উঠলো,আপা আপনি চিন্তা
করিয়েন না। আপনার বিয়ের ব্যবস্হা করছি।
সাক্ষী আমরাই দিব।চলেন।
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, কিসের বিয়ে?
আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা।
কেউ একজন বললেন,বিয়ে তুকে করতেই হবে।
না হয় এইরকম আরো কতো মেয়ের জীবন
নিয়ে খেলবি তার কোন ঠিক নেই।
কিছুই বুঝতে পারছিনা।চারদিকেই
কিয়েক্টা অবস্থা।হঠাৎ কয়েকজন আমাকে
ধরে কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে এসেছে।
একজন বলল,কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।
কাজী সাহেব কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে
ওদের চাপে পড়ে বিয়ের কাজটাও করা শুরু
করে দিলেন।আমাকে বলল,
-কবুল বলেন।
-না আমি কবুল বলবনা।আমি এই বিয়েতে
রাজি নই।
-ঠিক আছে আরো দুইবার বলেন কবুল।
-কিসের কবুল! আমি রাজি নই এই বিয়েতে।
-আরেকবার বলেন কবুল।
-কি আরেকবার বলবো?আমি কবুল বলতে
পারবোনা?
হঠাৎ সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেই চিৎকার
দিয়ে উঠলেন।কিছুই বুঝতে পারলাম না কি
হচ্ছে।কবুল বললাম কবে আমি?মেয়েটি
আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তার মানে আমার বিয়ে তাহলে হয়েই
গেলো?ভাবতেই পারছিনা কি হচ্ছে এসব।
মেয়েটি আমার হাত ধরে বাইরে বের হয়ে
যাচ্ছে। একজন বলল,ভাবী আপনাদের
ভালোই মানিয়েছে।আরেকজন বলল,ভাবী
কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।যে কোন
সময় প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে
ভুলবেননা।মেয়েটি টাটা দিয়ে চলে আসছে
বাইরে।একটা রিক্সা ঠিক করে আমাকে
রিক্সায় উঠিয়ে বলল,
--চলো বাড়ি যাব।
--যাওনা ত!আমিতো সেটাই চাই।এবার
আমাকে একটু মুক্তি দাও।আর কতো?
--এই ছেলে আমার শ্বশুর বাড়ি আমি চিনি
নাকি?আমাকে আব্বা আম্মার কাছে নিয়ে
যাও।
--মানে কি?কিসের শ্বশুর?আমি আর
পারছিনা প্লিজ যাও তুমি।
রিক্সাওয়ালাকে বলল সামনে যেতে।জোর
করে মেয়েটি আমার সাথে আমার বাড়ি
চলে আসছে।মেয়েটির সাথে যে একটু তর্ক
করবো সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছিনা আমি।সেই
প্রথম থেকেই মনে হচ্ছে মেয়েটি
কোনভাবে আমার পরিচিত।কিন্তু সেটাত
সম্ভব না।পরিচিত হওয়া কি আদৌ সম্ভব?
কি একটা ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেছি বুঝতে
পারছিনা।মেয়ে জাতিটাই মনে হয় এমন।
কি জানি সবাই এমন কিনা!
.
কলিংবেল চাপতেছি চার-পাঁচ মিনিট হয়ে
গেলো।এরপর কাজের বুয়া এসে দরজা খুলে
দিলো।দরজা খুলতেই মেয়েটি বুয়াকে
সালাম করে নিলো।দরজা খুলতে দেরি
হওয়াতে রাগ হলো খুব।বললাম,খালা কি
সমস্যা এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?
বলতেই মেয়েটি উঠে মুখ ঢেকে ফেললো।
আম্মা মনে করে সালাম করে ফেলেছে
হয়তো।তাই লজ্জা পাচ্ছে।একটু হাসিও
পেলো।
ঘরে ঢুকতেই আম্মা দেখে ফেললো।দেখেই
বলে উঠলো,এটা কে?মেয়েটি আম্মাকে
সালাম করলো।বলল,
--আপনার ছেলের বউ।আপনার বউমা।
--কি!বউমা?তুমিই কি তাহলে সেই...
# চলবে...
# পর্ব: ১
করছি এমন সময় পেছন থেকে কে একজন এসে
- হাতটা ধরলো।মনে হয় আমার গার্লফ্রেন্ডই
হবে।না দেখেই বললাম জান চলে এসেছো?
উত্তর শুনে ঘাবড়ে গেলাম খুব।বলল,কোন
কথা বলবেনা চলো আমার সাথে।
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম
--কে আপনি?
বলল,
--জান যেহেতু বলে ফেলেছ জান ই হবে।এত
তাড়াতাড়ি সব হয়ে যাবে আশা করিনি।
--আরে আপনি পাগল নাকি?কে আপনি?
আপনাকেত চিনিনা আমি।
--চিনতে হবেনা।মেয়ে মানুষের স্পর্শ
পেয়ে জান ত ঠিকই বলেছ।আবার এত
ন্যাকামি কিসের?
--আরে আমি আমার...
পুরোটা বলার আগেই থামিয়ে দিয়ে ধমক
দিয়ে বলল,
--কোন কথা শুনতে চাই না।চলো এখান
থেকে।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে বললাম,
--কোথায় যাবো?
--আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানেই।
মেয়েটি আমার হাত ধরে পার্কের বাইরে
নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমি কিছুই বলতে
পারছিনা।অনেকবার পরিচয় জিজ্ঞেস
করতে গিয়েও থমকে যাচ্ছি।মেয়েটার
হাতে যথেষ্ট শক্তি আছে বলতেই হবে।লক্ষ্য
করলাম আমাদের পিছু পিছু তিনজন মানুষ
হাটছে।ওদেরকে দেখে মনে হচ্ছে
আমাদেরকে অনুসরণ করেই এগুচ্ছে।সম্ভবত
মেয়েটিকে অনুসরণ করছে।যদিও আমার
অনুমান কতটুকু সত্য বুঝতে পারছিনা।
মেয়েটি আমার হাত ধরে কিছুক্ষণ হাটার
পর বলল,রিকশা ঠিক করতে।আমিও বাধ্য
ছেলের মতো রিকশা ঠিক করে নিলাম।
দুইজনেই রিকশাতে উঠে বসলাম।একটু সাহস
সন্ঞ্চয় করে বললাম,
--আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
--যেদিকে দুচোখ যায়।
--কি বলেন এসব!না না,আমি আর যেতে
পারবো না।এই মামা দাড়ান।
--মামা আপনি যান।এই তোমার সমস্যা কি?
যেখানে নিয়ে যাব সেখানেই যাবে।এত
প্রশ্ন করেবে না।
কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।একটা
মেয়ে আমাকে এইভাবে জোড় করেই
যেখানে খুশি নিয়ে যাচ্ছে অথচ আমি
কিছুই বলতে পারছি না।কিন্তু মেয়েটি ত
কিছু বলতেই দিচ্ছে না।তাছাড়া মেয়েটির
উদ্দেশ্যটা কি সেটাই ত জানতে পারলাম
না।কিছু বলার আগেই থামিয়ে দিচ্ছে।
এলাকায় যথেষ্ট সাহসি ছেলে নামে
পরিচিত হয়েও এখন আমি আস্ত একটা ভীতুর
ডীম হয়ে বসে আছি।একটা মেয়ের সাথেই
কথা বলতে পারছিনা।ভাবলাম নামটা
জিজ্ঞেস করি।বললাম,
--আপনার নামটাইত জানা হলোনা।
--এই ছেলে আমাকে জান বলছনা?জান বলেই
ডাকবে।আমিও জান বলেই ডাকব।
কি আজিব একটা ব্যাপার।সবকিছুই মুখের
উপর উত্তর দিয়ে দিচ্ছে।ভুলে কি বলে
ফেললাম আর এটা বলেই নাকি ডাকতে হবে।
নিজের মধ্যেই কেমন একটা অপরাধবোধ
কাজ করছে,একজন ছেলে হয়েও কেন আমি
কিছু করতে পারছি না?কোন প্রশ্নের উত্তর
ও খুজে পাচ্ছিনা।চারপাশের পরিবেশ
দেখে চলতে চলতে একটা কাজী অফিসের
সামনে এসে থামলো।
ভাড়াও দিয়ে দিল নিজে।বলল,
--জান চলো।
--জান চলো মানে কি?কোথায় যাব?
--ঐ যে কাজী অফিস।
--কাজী অফিস মানে!কাজী অফিসে আমার
কাজ কি?তুমিই যাও আমি বাইরেই আছি।
--এই ছেলে ভালোভাবে বললে কি কথা যায়
না কান দিয়ে? বিয়ে করব আমরা চলো।
--বিয়ে... মানে বিয়ে কাকে করব আমি?
কিসের বিয়ে? কি বলছ এসব?এই মেয়ে তুমি
কি পাগল নাকি?
মেয়েটি এবার গলা ছেড়ে চিৎকার করে
কথা বলা শুরু করছে।বলছে,
--তুমি তাহলে আমাকে বিয়ে করবেনা?
--আজিব আমি কেন তোমাকে বিয়ে করতে
যাব?
--তাহলে তোমার সবকিছু মিথ্যা ছিল?এত
সময়ের প্রেম কি তাহলে সব মিথ্যা?
--আরে!কি বলছ এসব তুমি?কিসের প্রেম?
মেয়েটি আবারো চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু
করে দিছে। আশেপাশের মানুষজন জড়ো
হতে লাগল।ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছে
অনেকে।মেয়েটি কান্না করে যাচ্ছে।হঠাৎ
এক লোক এসে বলল,
--আপা আপনি কান্দেন কেন?কি হয়ছে
সবাইকে খুলে বলুন।
মেয়েটি চোখ মুছে নিল।বলল,
--এতদিন আমার সাথে প্রেম করে এখন বলছে
আমাকে বিয়ে করবেনা।আপনারা দেখুন
কিভাবে আমাকে ঠকানোর চেষ্টা করছে।
কতরাত আমার সাথে কাটিয়েছে আমাকে
বিয়ে করবে বলে এখন বলছে আমাকে নাকি
চিনেইনা।
মেয়েটি আবারও কান্না করছে।ইতিমধ্যেই
আশেপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ
মন্তব্য করাও শুরু করে দিছে।কেউ কেউ বলছে
ছেলেটিকে দেখেত ভালো মনে হচ্ছে।
আরেকজনকে দেখিয়ে বলে উঠলেন,চেহারা
দেখছেন কত মায়াবী!ছেলেটা যে খারাপ
দেখে আপনি বুঝতেই পারবেননা।
কেউ কেউ মেয়েটির চোখের জলও মুছে
দিতে চাচ্ছে।অথচ এইদিকে আমি সম্পূর্ণ
অসহায়।কেউ একজনকে বিষয়টা যে বুঝাব
সেই পরিস্থিতি টাও নেই।অথচ আশেপাশে
সবগুলোই পুরুষ মানুষ।মেয়েটির কান্নার
কাছে সবাই অসহায় হয়ে পড়ছে।এককথায়
বলতে গেলে ইমোশনালি ব্লেকমেইমের
শিকার হয়েছে সবাই।আমার মনে হয় এই
পরিস্থিতিতে আমি থাকলে আমিও
মেয়েটিকেই সাপোর্ট করতাম।কত
নিখুঁতভাবে অভিনয় করে যাচ্ছে মেয়েটি
কারো বুঝার উপায় নেই।কিন্তু একটা
জায়গায় সমস্যা হচ্ছে খুব,মেয়েটি আমাকে
কেন বিয়ে করতে চাচ্ছে? তাছাড়া যে
পরিমাণ রূপ তার মধ্যে আছে তা দিয়ে
চাইলে এই শহরের খ্যাতিমান কাউকে
নিঃসন্দেহে বিয়ে করার যোগ্যতা রাখে।
তাছাড়া ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাবনা
নিয়ে যাওয়ার মতো যোগ্যতাও মনে হয়
আমার নেই।এই একটা প্রশ্নের উত্তর
কিছুতেই মাথায় আসছেনা।
মেয়েটি উপস্হিত জনতাকে উদ্দেশ্যে
বলল,আমাদের তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্হা
করেন।না হয় ও আবার আমাকে বিয়ে না
করে পালিয়ে যাবে।
রাগ হলো খুব।বললাম,কে বিয়ে করবে
তোমাকে?আমি?এই মেয়ে তোমার বাসায়
কি অভিভাবক নেই? উদ্দেশ্য কি তোমার?
তোমাকে কেন আমি বিয়ে করব?
মেয়েটি আবারো কাঁদছে।বলছে,দেখুন
আপনারা।আপনাদের সামনেই আমাকে
বিয়ে করবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছেন।ও
বিয়ে না করলে আমি আত্মহত্যা করতে
বাধ্য হবো।প্লিজ আপনারা কিছু একটা করুন।
একজন বলে উঠলো,আপা আপনি চিন্তা
করিয়েন না। আপনার বিয়ের ব্যবস্হা করছি।
সাক্ষী আমরাই দিব।চলেন।
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, কিসের বিয়ে?
আমি কোন বিয়ে টিয়ে করতে পারবোনা।
কেউ একজন বললেন,বিয়ে তুকে করতেই হবে।
না হয় এইরকম আরো কতো মেয়ের জীবন
নিয়ে খেলবি তার কোন ঠিক নেই।
কিছুই বুঝতে পারছিনা।চারদিকেই
কিয়েক্টা অবস্থা।হঠাৎ কয়েকজন আমাকে
ধরে কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে এসেছে।
একজন বলল,কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।
কাজী সাহেব কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে
ওদের চাপে পড়ে বিয়ের কাজটাও করা শুরু
করে দিলেন।আমাকে বলল,
-কবুল বলেন।
-না আমি কবুল বলবনা।আমি এই বিয়েতে
রাজি নই।
-ঠিক আছে আরো দুইবার বলেন কবুল।
-কিসের কবুল! আমি রাজি নই এই বিয়েতে।
-আরেকবার বলেন কবুল।
-কি আরেকবার বলবো?আমি কবুল বলতে
পারবোনা?
হঠাৎ সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলেই চিৎকার
দিয়ে উঠলেন।কিছুই বুঝতে পারলাম না কি
হচ্ছে।কবুল বললাম কবে আমি?মেয়েটি
আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
তার মানে আমার বিয়ে তাহলে হয়েই
গেলো?ভাবতেই পারছিনা কি হচ্ছে এসব।
মেয়েটি আমার হাত ধরে বাইরে বের হয়ে
যাচ্ছে। একজন বলল,ভাবী আপনাদের
ভালোই মানিয়েছে।আরেকজন বলল,ভাবী
কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবেন।যে কোন
সময় প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে
ভুলবেননা।মেয়েটি টাটা দিয়ে চলে আসছে
বাইরে।একটা রিক্সা ঠিক করে আমাকে
রিক্সায় উঠিয়ে বলল,
--চলো বাড়ি যাব।
--যাওনা ত!আমিতো সেটাই চাই।এবার
আমাকে একটু মুক্তি দাও।আর কতো?
--এই ছেলে আমার শ্বশুর বাড়ি আমি চিনি
নাকি?আমাকে আব্বা আম্মার কাছে নিয়ে
যাও।
--মানে কি?কিসের শ্বশুর?আমি আর
পারছিনা প্লিজ যাও তুমি।
রিক্সাওয়ালাকে বলল সামনে যেতে।জোর
করে মেয়েটি আমার সাথে আমার বাড়ি
চলে আসছে।মেয়েটির সাথে যে একটু তর্ক
করবো সেই শক্তিটুকুও পাচ্ছিনা আমি।সেই
প্রথম থেকেই মনে হচ্ছে মেয়েটি
কোনভাবে আমার পরিচিত।কিন্তু সেটাত
সম্ভব না।পরিচিত হওয়া কি আদৌ সম্ভব?
কি একটা ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেছি বুঝতে
পারছিনা।মেয়ে জাতিটাই মনে হয় এমন।
কি জানি সবাই এমন কিনা!
.
কলিংবেল চাপতেছি চার-পাঁচ মিনিট হয়ে
গেলো।এরপর কাজের বুয়া এসে দরজা খুলে
দিলো।দরজা খুলতেই মেয়েটি বুয়াকে
সালাম করে নিলো।দরজা খুলতে দেরি
হওয়াতে রাগ হলো খুব।বললাম,খালা কি
সমস্যা এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?
বলতেই মেয়েটি উঠে মুখ ঢেকে ফেললো।
আম্মা মনে করে সালাম করে ফেলেছে
হয়তো।তাই লজ্জা পাচ্ছে।একটু হাসিও
পেলো।
ঘরে ঢুকতেই আম্মা দেখে ফেললো।দেখেই
বলে উঠলো,এটা কে?মেয়েটি আম্মাকে
সালাম করলো।বলল,
--আপনার ছেলের বউ।আপনার বউমা।
--কি!বউমা?তুমিই কি তাহলে সেই...
# চলবে...
# পর্ব: ১
- # গল্প: পেয়েছি_নাকি_হারিয়েছি
Nice storey
ReplyDelete