#গল্পটা বন্ধুত্বের .


#গল্পটা বন্ধুত্বের
.
.
কলেজ শেষে বাড়ি ফিরছিলাম। রাস্তায় তুবা এসে হাজির...
.
.
তুবা: কিরে ফইন্নি তোর কলেজ শেষ নাকি?
আমি: না শুরু, দেখতেছিস না কলেজ যাচ্ছি!
তুবা: আচ্ছা তুই কি ত্যাড়া কথা বলা ছাড়া কথা বলতে পারিস না?
আমি: না পারি না! দেখতেছিস বাসায় যাচ্ছি তো আবার জিজ্ঞাস করিস কেনো?
তুবা: আচ্ছা রে বাপ, আমার ভুল হইছে। এবার চল আমার সাথে!
আমি: কোথায় যাবি? আর কেনো যাবি?
তুবা: ফুচকা খাবো চল! 
আমি: না না, আমার কাছে টাকা নাই। তুই যা!
তুবা: উমম, এমন ভাবে বলছিস মনে হয় কখনো টাকা দিছিস? কাহিনি বাদ দিয়া চল এবার!
.
.
তুবা আমার হাত ধরে টেনে টেনে ফুচকার দোকানে নিয়ে এলো। আমি কিছু বলতে পারি নাই! কারন সবসময় তুবার টাকায় ই খাই, আমার টাকায় আজো ফুচকা খাওয়ানো হয় নাই। টিউশনির টাকায় মোটামোটা নিজের প্রয়োজন মিটে যায়। আর ঘর থেকে যে টাকা দেয় সে টাকায় মোটামোটি সব চলে যায়, কিন্তু আমার পকেটে একটা টাকাও থাকে না। তাই তুবার টাকায় সবসময় খাওয়া হয়। আর তুবাকে আমি ফুচকা না খাইয়ে দিলে তুবা খায় না, আজকে তুবা কে ফুচকা খাইয়ে দিলাম। ফুচকা খাওয়া শেষে...
.
.
তুবা: ঐ তাজ, টাকা আজকে তুই দিবি! 
আমি: তুই খেয়েছিস টাকা তুই দে! আমি কেনো দিবো?
তুবা: আমি কখন খেলাম, তুই আমাকে খাইয়েছিস, টাকা তুই দে।
আমি: বললাম তো নাই আমার কাছে। ( একটু রাগি কন্ঠে)
তুবা: আহা রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমিও তো জানি তুই ফইন্নির কাছে টাকা নাই, আমি তো মজা করলাম মাত্র!
আমি: হ্যাঁ, ভালো করেছিস, এখন যাবি নাকি আমি চলে যাবো?
তুবা: উফফ, রাগ করিস কেনো?
আমি: বললাম তো রাগ করি নাই! গেলে চল নয়তো আমি গেলাম।
তু্বা: আচ্ছা চল, শুন তুই কিন্তু কাল কলেজ শেষে আমার জন্য গেটে দাড়াবি!
আমি: কেনো?
তুবা: তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো তাই!
আমি: কোথায় যাবি?
তুবা: মরতে যাবি, তুই যাবি মানে যাবি ব্যস!
আমি: তো কোথায় যাবি এটা বললে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে য়াবে?
তুবা: উফফ, এতো প্রশ্ন করিস কেনো? এখন বলবো না মানে বলবো না ব্যস, কালকে দাড়াবি আমি শুধু এটাই যানি, নয়তো ফল ভালো হবে না বলে দিলাম
আমি: ঠিক আছে দাড়াবো যা।
তুবা: আচ্ছা আমি এখন গেলাম।
আমি: আচ্ছা যা ভাগ।
.
.
আমি আর তুবা সেই কলেজের শুরু থেকে বন্ধু। তুবার সাথে বন্ধুত্ব হবার পর থেকে আল্লাহর ৩০দিনই জগরা লেগে থাকে, প্রতিদিন জগরা করলে আমাদের বন্ধুত্বের ভালোবাসা চুল পরিমানও নষ্ট হয় নি। এসবের মধ্যে কখন যে তুবাকে ভালোবেসে ফেলছি সেটা আমার নিজেরই অজানা, ঘুমের মধ্যে তুবাকে নিয়ো স্বপ্ন দেখে ঘুমেই বক বক করে রুমমেট কে পাগল করে ফেলছি। কিন্তু আজো তুবাকে বলতে পারি নাই, বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে, কারন আমার মত গরীব ঘরের ছেলেকে তু্বার মত হাই ক্লাস মেয়ে কখনো পছন্দ করবে না। উল্টা বন্ধুত্ব নষ্ট হবে। তাই নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করি নি।  পরের দিন তুবার কথা মত কলেজ ছুটির পর গেটে তার জন্য দাড়িয়ে আছি। তুবা প্রায় ২০ মিনিট পর সেখানে এসেছে। ইচ্ছা করছিলো তুবাকে সেই রকমের ঝারি দিবো। কিন্তু তুবাকে দেখেই আমার কথা বলা বন্ধ হয়ে গেলো, কারন তু্বা নীল শাড়ি আর নীল চুরি পরে এসেছে, আমার মনে হচ্ছিলো আমি ম্বপ্ন দেখছি কারণ তুবাকে স্বপ্নে আমি এমন সাজে দেখি। কিছুক্ষণ পর তুবার কথায় আমার ঘোর কাটলো...
.
.
তুবা: মুখটা বন্ধ কর নয়তো মশা ডুকবে! ( একটু হেসে)
আমি: আরে বাহ, দোস্ত এতো সুন্দন সাজ কার জন্য রে?
তুবা: তোর জন্য! ( অনেক আস্তে করে বললো)
আমি: আরে জোরে বল বুঝি নাই!
তুবা: তোর কান ওয়াস করাতে পারিস না? ( একটু রাগি কন্ঠে(
আমি: আরে, আবার বললেই পারিস, রাগ দেখাচ্ছিস কেন?
তুবা: বলছি কিছু না,( একটু চেচিয়ে)  চল এবার গাড়িতে উট।
.
.
তুবা আর আমি গাড়িতে উঠে বসলাম, কোথায় যাচ্ছি আমি জানি না! সেটা তুবা আর তুবার আল্লাহই ভালো জানে! জিজ্ঞাস করলে বলে জাহান্নামে যাচ্ছি। তাই জিজ্ঞাস না করে চুপচাপ বসে আছি, আর পাশে তুবার বক বক তো ফ্রি, কিছুক্ষণ পর গাড়ি একটা পার্কে এসে থামলো, কিছুক্ষণ থ হয়েছিলাম। কিন্তু তুবা যেহেতু মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে ঘুরাঘুরি করে সেহেতু আজকের দিনটাও স্বাভাবিক ভাবে নিলাম, কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসলাম, তুবা বক বক করছে আর আমি শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ করছি, তারপর হঠাৎ তুবা বলে উঠলো...
.
.
তুবা: কিরে আজকে আমাকে কোন প্রেত্মির মত লাগছে বললি না?
আমি: আরে না, আজকে তোকে প্রেত্নি না আজকে তোকে পরীর মত লাগছে।
তুবা: যেমনটা স্বপ্নে দেখতি তেমন ভাবে সাজতে পেরেছি?
আমি: মামম মানে?( একটু গাবড়ে গেছি)
তুবা: মানে হলো স্বপ্নে আমাকে যে রূপে দেখতি ঠিক সে রূপ নিতে পেরেছি?
আমি: কেকক কে বলছে তোকে? ( এবার পুরো থ হয়ে গেছি, এমন সাজে তো আমি স্বপ্ন দেখে রুমমেট কে জ্বালাতাম, কিন্তু তুবা জানলো কি করে)
তুবা: কে আর বলবে, তোর রুমমেট বলছে। সেই কবে থেকে তোকে ভালোবাসি আর আমি জানি তুইও আমাকে ভালোবাসিস! কিন্তু আমি বলিনি কারন তোর মুখ থেকে আমি শুনতে চাই, কিন্তু আজ পর্যন্ত তুই বললি না। আর তোর খবর সবসময় তোর রুমমেটেরর থেকে নিতাম। সে আমাকে তোর স্বপ্নে বক বক করা গুলো ফোনে শুনাতো। তাই তোর স্বপ্নের সাজে সেজে এসেছি। আরে মগা এতো ভালোবাসিস কিন্তু এখনো বলতে পারতেছিস না আমাকে?( সব গুলো কথা একদমে বলে ফেললো)
আমি: আসলে আমি ভেবেছিলাম তুই আমাকে পছন্দ করবি না উল্টা বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে, সেই ভয়ে কখনো বলতে পারিনি। বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেলে তুই কথা বলবি না, আর তোর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারবো না, তাই কখনো বলি নাই,নিজের ভিতর চেপে রেখেছিলাম।
তুবা: আরে গাধা, আজতো সব জেনেছিস! আজতো বল!
আমি: I love you তুবা! তোকে ছাড়া আমি বাচবো না।
তুবা: ধেত। তুই একটা ক্ষেত, বাংলা সিনামার ডাইলো দিতেছিস, এভাবে কেউ প্রপোজ করে।
আমি: I love you তুবা। তুই আমার স্বপ্নে দেখা সেই রাজকন্যা, যাকে আমি প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি। তুই কি আমার ম্বপ্নটা পূরন করবি? ( হাটু গেড়ে বললাম)
তুবা: I love you to, আমি তোর স্বপ্ন পূরন করতে রেড়ি আছি।
.
.
এটা বলেই তুবা আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমিও তুবাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। আজ মনে হচ্চে আমার ম্বপ্ন গুলো বাস্তবে রূপান্তরিত হচ্ছে। বন্ধুর ভালোবাসা সবার কপালে জুটে না, তাই নিজেকে অনেক লাকি মনে হচ্ছে। এখনো আমাদের মধ্যে সেই আগের মত ৩০দিনেই জগরা লাগে তারপরেও আমাদের ভালোবাসা এতুটুকুও কমে নি। 
বেচে থাকুক আমাদের মত সকল ভালোবাসা।
বিঃদ্রঃ ভুলক্রটি ক্ষমা করবেন!

Comments

Popular posts from this blog

বাংলা পোষ্ট বয়স শিমা